স্বাস্হ্য ডেস্ক :
দীর্ঘদিন ধরে খাবার এ অনিয়ম চলতে থাকলে, না খেয়ে থাকার কারণে, অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে পেট ফুলে থাকাটা বর্তমানে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন প্রতিনিয়ত। সাধারণত অনেকক্ষণ না খেয়ে ক্ষুধা চেপে রাখলে, বেশি বেশি তেলে ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার খেলে, পর্যাপ্ত পানি পান না করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যেকোনো বয়সে হতে পারে। মধ্য বয়সে বা তার কম বয়সে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে আমরা ততটা গুরুত্ব দেই না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিই। কিন্তু যখন এটি আলসারের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন আমরা সাবধান হওয়ার চেষ্টা করি। সেটা অবশ্য গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসার জন্য বেশ দেরি। তাই গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা সময় থাকতেই করা উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বড় সমস্যা হলো পেট ফুলে থাকে। এতে করে শারীরিক অস্বস্তি তো হয়ই, নিজেকে দেখতেও বাজে লাগে। আর তাই যদি আপনার গ্যাসের সমস্যা নাও থেকে থাকে তাহলেও চেষ্টা করা যেন গ্যাসের সমস্যা না হয়। তার জন্য আপনাকে করতে হবে নিচের কাজগুলো।
তালিকা তৈরি
অনেক গ্যাস্ট্রোন্টেরোলোজিস্ট বলেন যে, আপনি প্রথমে এটা লক্ষ্য করুন যে আপনি আসলে প্রতিদিন কী কী খাবার খাচ্ছেন। মাউন্ট সিনাইয়ের ইচান ইস্কুল অব মেডিসিন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বেঞ্জামিন কোহেন বলেন, আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার উচিত একটি লিখিত তালিকা তৈরি করা। তাতে থাকবে আপনি কখন খাবার খাচ্ছেন, কী খাবার খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন, খাওয়ার আগে এবং পরে আপনার অনুভূতি কী বা গ্যাসের সমস্যা ঠিক কতক্ষণ পরে দেখা দিচ্ছে। এতে করে অযথা ডাক্তার বাড়ি দৌঁড়তে হবে না। আপনি নিজেই বাসায় বসে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় সেই খাবারগুলো তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলুন।
তাজা ফল এবং শাকসবজি:
ড. কোহেন বলেন, এমন কোন জাদুকরী খাবার নাই যা আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মিনিটের ভেতর সারিয়ে দিতে পারে তাই আপনার নিজের সাবধানতা নিজেকে অবলম্বন করতে হবে। প্রতি বেলা খাবারে চেষ্টা করুন বেশি করে তাজা ফল এবং শাক সবজি খাওয়ার।
খাওয়া এবং পান করা:
একই সঙ্গে শক্ত খাবার মুখে চিবিয়ে খাওয়া এবং তরল খাবার পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার পর পরই পানি পান করা উচিত নয়। এতে করে খাবার পাকস্থলিতে ভেসে থাকে এবং হজমে অনেক সময় নেয়। ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
স্ট্র এর ব্যবহার:
আমরা যখন কথা বলি, খাই বা কোনো কিছু পান করি তখন মুখের মাধ্যমে কিছু বাতাস আমাদের পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। ম্যানহাটন গ্যাস্ট্রোন্টেরোলোজির ফাউন্ডার ড. খোডাডাডিয়ান বলেন, স্ট্র দিয়ে কোনো পানীয় পান করার সময় বা ধূমপান করার সময় বেশ বাতাস ঢুকে যায় পাকস্থলিতে। যা গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ। তাই স্ট্র দিয়ে পানীয় পান করা এবং ধূমপান করা বন্ধ করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা:
প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি আমাদেরকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে এবং শারীরিক অনেক জটিলতা কমিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই বলে একবারে অনেক বেশি পানি পান করা ঠিক নয়। থেকে থেকে পানি পান করুন। এক এক বারে সর্বোচ্চ এক গ্লাস পানি পান করুন। ভাত বা ভারী কোনো খাবার খাওয়ার অন্তত মিনিট ১৫ পরে পানি পান করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
আমাদের অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে। অনেকে এটা সাধারণ সমস্যা মনে করি আবার অনেকে লজ্জায় ডাক্তারের কাছে যায় না। এটি কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে হজম হওয়া খাবার পেটে জমে থাকে। ফলে পরবর্তী খাবার হজম হতে সময় নেয়। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় এবং পেট ফুলে থাকে।
****একনজরে দেখে নেই****
যে নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে:
# প্রথমত: পরিমিত খাবার খেতে হবে।
# যাদের বয়স বেশি তাদের চর্বিজাতীয় মাংস খাওয়া যাবে না।
# অতিরিক্ত শুকনা মরিচের ঝাল দিয়ে মাংস রান্না করবেন না। কারণ শুকনা মরিচের ঝাল গ্যাস্টিক বাড়িয়ে দিতে পারে।
# পেট খালি না রাখা, আবার পেটভরে না খাওয়া।
# প্রতিদিন একই সময়ে আহার করা।
# কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকেল আশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
# খাবার সব সময় ভালোমতো চিবিয়ে খেতে হবে।
# যে কোনো প্রকার কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করতে হবে।
# খাবার খাওয়ার সময় টিভি না দেখা এবং কোন প্রকার তর্ক, বিতর্কে না করায় ভালো।
# খাবার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে না পড়া। অন্তত: খাবার একঘণ্টা পর শোয়া উচিত।
# ধুমপানের অভ্যাস থাকলে, তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
# টেনশন মুক্ত থাকতে হবে। কারণ মানসিক উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
# নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।
# প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেতে হবে।
# ইসুবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে সকালে বা রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার পাবেন।
# কিছুটা শুকনো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনার এসিডিটি সমস্যা কমে যাবে। কারণ আদা এসিডিটি কমাতে বিশেষভাবে কাজে আসে।
এভাবে কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনি স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবেন। এসিডিটি সেক্ষেত্রে আপনার ধারে কাছেও ভিড়তে পারবে না।মনে রাখবেন,
সুশৃঙ্খল জীবনই সুস্বাস্থ্য।
নতুন নতুন গল্প ও জোকস পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটে
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz